এর আগে জানিয়েছিলাম পাঁচ ঘন্টা ড্রাইভের পর অবশেষে পেনাং পৌঁছেছি। অরূপের গাড়িতে আমি, রিতা, মাতিস, অভিক আর অরূপ নিজে। পেনাং এ ঢুকে প্রথমেই যা করেছি তা হলো পরদিন স্নোরক্লিং এর টিকিট কনফার্ম করা। সেটা হয়ে গেলে রাজ্যের আলস্য আমাদের জড়িয়ে ধরে। আমি দেশে একটানা ১০ ঘন্টার উপর ড্রাইভ করলেও ক্লান্ত হইনি কখনও, কিন্তু এখানে পেছনে বসে থাকার অনভ্যস্ততায় অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো। গতবার তিওমেন যাবার সময় অনেকখানি রাস্তা আমার হাতে স্টিয়ারিং তুলে দিলেও এবারে অরূপ মহানন্দে গাড়ি চালাচ্ছিলো, আমিও কিছু বলি নি।
যাই হোক আসুন আবারো মূল গল্পে ফিরে যাই।
বালি হাই
সন্ধ্যা নামি নামি করছে। আকাশও মেঘলা, কয়েকটা গাড়ি ইতোমধ্যেই হেড লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে। ঠিক করলাম কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ডিনার সেরেই হোটেলে উঠব। গাড়ি চললো গার্নি ড্রাইভের দিকে। ১৯৫১ সালে তৎকালীন বৃটিশ রাষ্ট্রদুত স্যার হেনরী গার্নিকে মালয় কম্যুউনিস্ট গেরিলারা এ রাস্তায় গুলি করে মেরেছিল। গুলির সময় সাথে থাকা স্ত্রী আর ড্রাইভারের জীবন বাঁচাতে উনি রোলস রয়েস থেকে নেমে যান এবং নিহত হন। মালয় কম্যুউনিস্ট পার্টির নেতা চিন পেং পরবর্তিতে জানিয়েছেন সেটা ছিলো একটা নিয়মিত টহলের ঘটনা এবং কয়েকদিন পর পত্রিকার খবরে তারা নিহতের পরিচয় জানতে পারেন।
অরূপ এর আগেও এদিকে এসেছে, সুতরাং রাস্তা খুঁজে পেতে সমস্যা হলো না। এ ফাঁকে চুপিচুপি একটা কথা জানিয়ে রাখি, আমাদের সচল মাশীদের জন্ম কিন্তু এই পেনাং-এ। জর্জটাউনে সাগরের পাড় ঘেঁষে চমৎকার রাস্তা গার্নি ড্রাইভ, একপাশে নিচু রেলিং এর ওপারে সমুদ্র অন্যপাশে বেশিরভাগই খাবারের দোকান, স্টেশনারি শপ, প্রচুর টুরিস্ট হেঁটে বেড়াচ্ছে সমুদ্রের পার ধরে, সময়টা ভাটার, রেলিং থেকে কিছুটা দূরে শান্ত সমুদ্র আস্তে আস্তে আরো দূরে নেমে যাচ্ছে, দুয়েকটা সামুদ্রিক পাখি ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে তাতে। এপারের নিয়ন সাইনগুলো আস্তে আস্তে আলো ছড়াতে শুরু করলে আমরা এসে পৌঁছালাম চমৎকার রেস্টুরেন্ট “বালি হাই”এ। ঢোকার দরজায় বড় বড় লেখা “If it swims we have it”।
প্রায় ৫০০ জনের বসার ব্যবস্থা রাখা বিশাল এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় না তেমন কোনো সামুদ্রিক প্রাণী নেই। আর আশ্চর্য যে সবই জীবন্ত! একপাশে বিশাল বিশাল ট্যাঙ্কে ভেসে বেড়াচ্ছে ৫/৬ কেজি ওজনের অস্ট্রেলিয়ান লবস্টার থেকে শুরু করে নানান জাতের মাছ আর কাঁকড়া, কাঁকড়ারও আছে প্রকারভেদ, আলাস্কান স্পাইডার থেকে শুরু করে ৮ কেজি ওজনের রাজ কাঁকড়াও দেখলাম। আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলেই কিছুক্ষণ পরই খাবার টেবিলে চলে আসবে, চাইলে পাশে কাচ দিয়ে ঘেরা রান্নাঘরের ভেতরে রান্নাটাও দেখে নেয়া যায়।
আমরা বসেছিলাম মূল শেডের বাইরে রাস্তার দিকে ছোট ঝুপরির নিচে, এদিকটা খোলা, তাকালেই সমুদ্র, একটু পর আমাদের দৃষ্টি আটকে দিয়ে গাড়ি পার্ক করা শুরু হলো, খাওয়ায় মন দিলাম আমরা।
চমৎকার স্বাদের এক টেবিল ভরা খাবার শেষ করে আমাদের আর উঠতে ইচ্ছা করছিলো না, এমন সময় শুরু হলো আকাশ কাঁপিয়ে ঝড়বৃষ্টি। আমরাও আড্ডা আর বিশ্রামের সময় পেলাম। ঘন্টা খানিক পর বৃষ্টি ধরে এলে উঠলাম, তখনও হোটেল ঠিক করা হয় নি আমাদের।
বাটু ফিরিঙ্গি
মালয়েশিয়ান ভাষায় বাটু মানে পাথর, সে অর্থে জায়গাটার নাম ফিরিঙ্গিদের পাথর। পেনাং এর উত্তর-পুবে বাটু ফিরিঙ্গি এর সুন্দর বিচ আর রাতে বসা হকার মার্কেটের জন্য বিখ্যাত। অনেকগুলো সুন্দর হোটেল পাহাড়ের কোল বেয়ে প্রায় বিচের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। জর্জটাউন থেকে বেশ আঁকাবাঁকা আর উঁচুনিচু রাস্তা ধরে এদিকে আসতে হয়। রাতে থাকার জন্য আমরা বেছে নিয়েছিলাম এখানকারই ডি'ফিরিঙ্গি হোটেল। পরদিন ভোরে আমাদের তুলে নেবার জায়গা এখানথেকে হাঁটা পথে পাঁচ মিনিট।
পরদিন ভোর ছয়টায় বাস ধরতে হবে, ডেকে তোলার দায়িত্ব আমি নিয়ে যার যার রুমে। চাবি ঘুরিয়ে ঢুকতেই অভ্যর্থনা জানালো বিশালাকায় ইঁদুর।
পুলাও পায়ার
ভোরে সঠিক সময়ে উঠার বাড়তি সতর্কতা হিসাবে হোটেল ম্যানেজারকে বলে রাখলেও ভোরে ঠিক সময়মতো উঠতে পেরেছিলাম সবাই। ডাকতে এসে যদি ফিরে যাই সেজন্য দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়েছে অভিকরা। হাতমুখ ধুয়ে বাসের অপেক্ষায় হলিডে ইনের লবিতে পাঁচ মিনিট আগেই আসতে পেরেছি। বাসও এলো সময়মতো, আমরাও উঠে বসলাম, গাইড এসে সবার হাতে প্লাস্টিকের ব্যান্ড পরিয়ে দিয়ে গেল, পরবর্তী কয়েক ঘন্টা এটাই আমাদের টিকিট।
ভোরে রাস্তায় তেমন ভিড় নেই, রাস্তায় মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে ২/১ জন কে তুলে নিয়ে জেটিতে এসে দেখলাম আমাদের মতন জনা পঞ্চাশেক দাঁড়িয়ে আছে ফেরির অপেক্ষায়। পেনাং থেকে পায়ার ফেরিতে দুঘন্টা উত্তরে, লাংকাউই থেকে দক্ষিণে এক ঘন্টা। প্রতিদিন এ দু দ্বীপ থেকে ১০০ জনের অনুমতি মেলে পায়ারে যেতে। স্নোরক্লিং কিংবা স্কুবা এগুলোই থাকে উদ্দেশ্য। মালয়েশিয়ার অন্য সব স্নোরক্লিং সাইটের চাইতে এখানকার খরচ অনেক বেশি।
দু ঘন্টা পর তীর থেকে আধ কিমি দূরে পায়ার এর ভাসমান জেটিতে নেমে চারদিক একবার দেখে নিলাম। পানির নিচে কোরালের উপর ভাসমান ৪৯ বাই ১৫ মিটারের জেটি, তার উপর বসার জন্য গোল করে সাজানো টেবিল চেয়ার, কয়েকটি টয়লেট আর বাথরুম, একপাশে খাবার জায়গা আর স্যুভেনির শপ। চারদিকে নীল পানি, এর মাঝে কিছু জায়গা ঘেরাও দেয়া টুরিস্টদের জন্য, তার বাইরে সাঁতার কাটা নিষেধ। নিচে পানিতে তাকালে হরেক রকমের মাছ আর কোরাল চোখে পড়ে।
টেবিলের উপর মাস্ক, একপাশে ফ্লিপার আর লাইফ জ্যাকেট। এক এক করে পড়তে পড়তে গাইডের বক্তব্যও শুনে নিলাম। সিঁড়ি বেয়ে পানিতে নামার সময় নিচে তাকালে কয়েক মিটার নিচের মাটি পরিষ্কার দেখা যায়, কোরালের পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ভেসে বেড়াচ্ছে নানান প্রজাতির মাছ, খুব কাছে এসে গা ছুঁয়ে যায়, আবার ধরতে গেলে পালিয়ে যায়। পানির নিচে আলোছায়ার অদ্ভুত খেলা। উপরে কড়া রোদ। মাস্ক ঠিক থাকলে একটানা নিচে তাকিয়ে ভেসে থাকা সম্ভব। এখানকার সরবরাহ করা মাস্কগুলো অতি ব্যবহারে নতুনত্ব হারিয়েছে। মাঝে মাঝেই নোনা পানি ঢুকে যায়, নিঃশ্বাসের গরমের সাথে নোনা পানিতে চোখ জ্বলে।
মাতিসের সাইজের মাস্ক মেলে নি, যেটা পড়েছে তাতে একটু পরপরই পানি ঢোকে, ফ্লিপারটাও সাইজে একটু বড়, তাতেও তার উৎসাহের কমতি নেই, সাঁতার কেটেই আনন্দ করছে। রিতার অবস্থাও তথৈবচ। সে আবার সাঁতার জানে না। মাতিস মাঝে মাঝেই ওর মাকে উৎসাহ দিচ্ছে, ‘মা মা এভাবে করো’।
আমি নেমেছিলাম ক্যামেরা হাতে, একটু পর সেটা তুলে দিলাম অভিকের কাছে। এখানকার কোরাল সুন্দর, মাছ আর সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যাও বেশি। জেটির নিচে কাচ দিয়ে ঘেরাও দেয়া কেবিন আছে, তাতে দাঁড়িয়ে থাকলেও নিচের সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়।
দুপুরের খাবার ব্যবস্থা জেটিতেই, বুফে। অনেকক্ষণ সাঁতার কেটে ক্ষুধা ভালোই পেয়েছে। পেটে ক্ষুধা নিয়ে খাবারের মান বিচার করি নি। খাওয়ার পর সবাই শার্ক দেখতে গেলেও আমি আবার পানিতে নেমেছিলাম।
বিকেলে ফিরতি যাত্রা, লানকাউই থেকে ফেরি এলে এক এক করে উঠে পড়লাম, মাঝখানে একটু ঝিমুনি এলেও উঠে বাইরের ডেকে চলে এসেছি। চারদিকে পানির উপর জেগে থাকা দু একটা পাহাড়ের মাথা আর দূরে পেনাং এর হাইরাইজগুলো আবছা আবছা দেখা যায়, ফেরির গতি ভালোই, ডেকের রোদ গায়ে অসহনীয় উঠার আগেই ফেরি জেটিতে চলে এলো। সেখান থেকে শেষ বিকালে হোটেল পৌঁছালাম। কথা ছিলো সেদিনই কুয়ালালামপুর ফিরবো। কিন্তু দেখা গেল সবাই আরেকদিন থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
বিচ আর হকার মার্কেট
হোটেলের ঠিক উলটো দিকে রাস্তার পাশে বিশাল খোলা পার্কিং লট, সেখান থেকে পায়ে চলা পথ নেমে গেছে বিচের দিকে। পার্কিং লটের ঢোকার মুখে পাশের পাকা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে একচালা স্যুভেনির শপ। হরেক রকমের জিনিস, কিছু সেখানকার নিজস্ব তৈরি হলেও বেশির ভাগই ভিয়েতনাম থেকে আনানো। হোটেল থেকে বের হয়ে অরূপ আর অভিক নিচে বিচে চলে গেলে আমরা মার্কেটে ঘোরাঘুরি শুরু করলাম। বড় একটা কাঠের প্লেটে জর্জটাউনের রাস্তা আঁকা, তাতে আবার সাদা ঝিনুক বসানো, দেখেই পছন্দ হলো, আবার ঝিনুক বসানো কাঠের টিস্যু বক্স। দামাদামি করতে যেয়ে দেখলাম দোকানদার বাঙালি। কেনাকাটা সবে মাত্র শুরু হয়েছে তেমন সময় নিচ থেকে ফোন, মামা তাড়াতাড়ি আসেন, গোলাপি সানসেট, আমরা দৌঁড়ালাম।
বিচ সুন্দর, এরইমাঝে জেটস্কির ভমভম আওয়াজ দৃষ্টি সেদিকে টানে। তাকিয়ে দেখি ওর পেছনে দড়িতে বেলুন বেঁধে উড়ছে কয়েকজন। আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে দেখে মাতিস আর রিতা কোমরে দড়ি বেঁধেও উঠতে পারল না। একটা বাঙালি ছেলে ঘোড়া ছুটিয়ে মাতিসকে নিয়ে গেল। আমার ক্যামেরা ব্যস্ত হয়ে উঠার আগেই শুরু হলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। পেনাং এর বৃষ্টি, কখন আসে কখন যায় কোনোই ঠিক নাই। ছুটলাম সবাই পারের দিকে। ঘোড়ার সহিস ছেলেটা মাতিসকে নিরাপদে পারে পৌঁছে দিয়ে গেছে।
ভারতীয় খাবার, রাতের পেনাং, আর ম্যান ফর ম্যান, লেডিস ফর লেডিস
বৃষ্টি থামতে থামতে রাত নেমে এসেছে পেনাং-এ। রাস্তাঘাট ভেজা, এরই মাঝে লোক চলাচল শুরু হয়েছে আবারো, তিন চাকার রিকশাও দেখলাম কয়েকটা। আশে পাশের দোকানগুলো ঝাঁপ খুলে তৈরী। ঠিক করলাম রাতের খাবার খেয়েই মার্কেটে ঢুকব। কোথাও বেড়াতে গেলে স্থানীয় খাবারের প্রতি একটা পক্ষপাতিত্ব থাকলেও কাছাকাছি ভারতীয় খাবারের দোকান দেখে ঢুকে পড়লাম। নামেই শুধু ভারতীয়, মান আর স্বাদ কিংবা দামের তুলনায় পরিমাণ কোনটাই আমার পছন্দ হয়নি।
এবারে ঘোরাঘুরি, টিপটিপ বৃষ্টি, নানান জাতের আর পদের শোপিস, ঘড়ি, ঘর সাজানোর সাজসরঞ্জাম, চুলের ফিতা, হারবাল ক্রিম, বাঘ আর বানরের তেল, ট্রাভেল ব্যাগ, জুতা কিংবা স্যান্ডেল, আইসক্রিম, ক্রোকারিজ, টিশার্ট, স্কার্ট, বাটিকের কাপড়, কাঠের কাজ করা লাইট শেড, বই, সিডি, ছোট খাটো বৈদ্যুতিক সামগ্রী কোনো কিছুরই অভাব নেই এই মার্কেটে। এরই মাঝে ব্যাগের ওজন বাড়তে থাকল, সাথে চললো ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক।
আমরা ঘুরছি এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। এক পাশে কাগজ-পেন্সিল নিয়ে চিত্রকরের দল বসে গেছে, তাদের সামনে এক তামিল পরিবার মূর্তির মতন বসে আছে। আস্তে আস্তে কাগজে ফুটে উঠছে তাদের চেহারা। পাশেই সিংহলি মালিকাধীন স্যুভেনিরের দোকান তার আলোকসজ্জার গুণেই ভেতরে টেনে নিলো আমাদের। চমৎকার সুন্দর সব জিনিস, দামও তেমন চড়া। অনুমতি নিয়ে ছবি তোলা শুরু করলাম। দোকান বন্ধ হবার সময়ও ত্রিশ মিনিট পেরিয়ে গেছে, অগত্যা আমরা বের হলাম হোটেলে ফিরব বলে। গল্প করতে করতে ফিরছি সবাই, হোটেলের গেটের কাছে আসতেই পাশ থেকে স্থানীয় একজন নিচু গলায় বললো কাম ইন স্যার, ম্যান ফর ম্যান, লেডিস ফর লেডিস।
বুঝতে কিছুক্ষণ সময় লাগলেও বুঝলাম ভদ্রলোক পাশের পা টেপা দোকানের। ব্যাংকক, বেইজিং এর মতন মালয়েশিয়ার টুরিস্ট স্পট গুলোতেও পা টেপা দোকানের অভাব নেই। কুয়ালালামপুরের দোকানগুলোর সামনে বড় বড় পোস্টার টানিয়ে পা টেপার বৈজ্ঞানিক দিক ব্যাখ্যা করে ক্রেতা আকর্ষণ করা হয়। আমরা পা টেপাটেপিতে না যেয়ে রঙ্গীন আলো গায়ে মেখে ঘুরতে ঘুরতে হোটেলে ঢুকে গেলাম।
প্রজাপতি আর লাভ লেন
বুকিং এর সময় দেখেছিলাম এ হোটেলের চেক আউট সময় সকাল দশটা, তাই তখনই বলে রেখেছিলাম আমরা বিকেল ৩টায় হোটেল ছাড়বো, এসময় টুরিস্ট কম বলে রাজি হয়েছিলো তখন। সকালে নাস্তা করে আমরা তাই চলে গেলাম প্রজাপতির বাগান দেখতে।
প্রজাপতির বাগান এরা বলে তামান রামা-রামা।আমরা যে রাস্তায় বাটু ফিরিঙ্গি এসেছি সে পথ ধরে আরো ১০ কিমির মতন সামনে এই পার্ক। প্রায় আড়াই একরের এ বাগানে ওদের কথানুযায়ী ১২০ প্রজাতির ৪০০ ধরনের প্রজাপতির সংগ্রহ আছে।
পার্কে ঢোকার মুখেই বানানো পাহাড়ে বসে থাকা বিশাল তিনশিঙা বিটল আমাদের অভ্যর্থনা জানালো। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকেই প্রজাপতির ছোঁয়া পেলাম। নানান রঙ, আকৃতি আর ধরনের অগুনতি প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে, প্রত্যেকটাই আলাদা আলাদা সুন্দর। উড়ে এসে গায়ে বসে আবার চলে যায়। কিছু কিছু প্রজাপতি খুব শান্ত হয়ে বসলেও কয়েকটাকে একবারের জন্যও ক্যামেরার ফ্রেমে আনতে পারি নি ওদের ব্যস্ততার জন্য। ছোট্ট এ বাগানের বাড়তি আকর্ষণ এর ভেতরের মিনি জু আর পোকা মাকড়ের জাদুঘর। এছাড়াও স্যুভেনির শপ আর একটা আর্ট গ্যালারিও আছে। জু তে বিটল, শিংওয়ালা কচ্ছপ, স্করপিয়ন আর ড্রাগন দেখলাম। জাদুঘরটা আরো চমৎকার, বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা নানান জাতের পোকামাকড় আর সরীসৃপ বয়ামে রাখা। দু’ঘন্টার চমৎকার সময় কাটিয়ে বাটু ফিরিঙ্গিতে বেলা বারোটার আগেই ফিরে এলাম। রিতা আর মাতিসকে হোটেলে রেখে আমরা তিনজন চলে এলাম জর্জটাউনে।
জর্জটাউনের আধুনিক ইতিহাস সিঙ্গাপুরের চাইতে পুরোনো। জর্জটাউনের জন্ম ১৭৮৬ সালে আর সিঙ্গাপুরে বৃটিশরা আসে ১৮১৯ সালে। তারও কিছুকাল পর বৃটিশরা এ দুটো অঞ্চলকে সিটি হিসাবে ঘোষণা করে। বৃটিশদের দখলে যাবার আগে এ দুটোই যথাক্রমে কেদারের সুলতান আর জোহরের সুলতানদের দখলে ছিলো। বৃটিশদের কাছে সে সময় সিঙ্গাপুরের চাইতে জর্জটাউনের গুরুত্ব অনেক বেশি ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং এর পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানান মেরুকরণে জর্জটাউন সিঙ্গাপুরের কাছে তার অবস্থান হারায় এবং ২০০৮ সালে এর পুরোনো অঞ্চলগুলো ইউনেস্কো হেরিটেজ হিসাবে ঘোষিত হয়।
স্থানীয় মুসলমান, ভারতীয় তামিল আর চাইনিজ বংশোদ্ভূতদের নিয়ে জর্জটাউন। হাতে সময় কম বলে স্বল্প সময়ে শুধুমাত্র দু একটা রাস্তা ঘুরে দেখা ছাড়া আর কিছুই হলো না। ছবি তোলার জন্য জর্জটাউনে কমপক্ষে দিন দুই থাকা উচিত।
এবারে ফেরার পালা
বিকেল ৩টায় হোটেল ছেড়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ফিরতি যাত্রায় কুয়ালালামপুরে। এবারে রাস্তায় ভালোই বৃষ্টি পেয়েছিলাম। মাতিসের টুইন টাওয়ার দেখার শখ মিটিয়েছে অরূপ ওর বাসায় ফেরার পথে টুইন টাওয়ার ঘুরিয়ে এনে। রাতে গোছগাছ সেরে খুব ভোরে যখন অরূপ মাশীদের বাসা ছাড়লাম মাতিস তখন তার সেই চেনা ডায়লগ ছাড়লো “বাবা, আমরা কী আবার এখানে আসবো?” উত্তর দিতে পারি নি, আসলে এ উত্তর আমার জানা নেই।
রবিবার, জুন ০৬, ২০১০
পেনাং পেনাং ...
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন