প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তায় বার্সিলোনা সব উৎসবের সেরা উৎসব “Feast of La Mercè” পালন করে থাকে। ওদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে এ উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট। বার্সিলোনার অত্যন্ত জনপ্রিয় এ উৎসবের সময় পুরো শহরই উৎসবের মঞ্চে রূপান্তরিত হয়। ঐতিহ্যবাহী লোক কাহিনিভিত্তিক নাটক, পালা, গান থেকে শুরু করে আধুনিক কনসার্ট কিংবা নাচের অনুষ্ঠান সেপ্টেম্বরের ২৩ থেকে ২৬-২৭ তারিখ পর্যন্ত বার্সিলোনাবাসীর রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।
৬০০ মঞ্চের এ বিশাল আয়োজন কিন্তু কোথাও কোনো বিশৃংখলা নেই। আর তা সম্ভব হয় স্থানীয়দের সতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আর প্রশাসনের সুনিপুণ তত্বাবধানে। এক বছরের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় পরবর্তী বছরের পরিকল্পনা, আর এতে অর্থ যোগানোর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ উৎসবের সমস্ত আয়োজন সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তাই পর্যটকদের কাছে এর আবেদন অনেক বেশি।
২০০৯ এর সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ দুপুরের পর গেস্টহাউসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, এমন সময় বাইরে অনেক্ষণ যাবৎ বিউগল, বাঁশি আর ড্রামের একটানা চলমান সুরে বুঝতে পারলাম সামনের রাস্তায় কোনো আনন্দমিছিল হচ্ছে। কৌতূহল মেটাতে বারান্দায় আসতেই দেখি এলাহি কারবার। ছোট্ট গলি মতন রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার মানুষ গিজগিজ করছে আর এর মাঝখান দিয়ে হেসে খেলে বাজনা বাজিয়ে নেচে বেড়াচ্ছে দৈত্যাকৃতির সব মানুষ। একদলের পেছনে আরেক দল, তারপর আরো, এর কোনো বিরাম নেই। বারান্দা থেকে কিছুক্ষণ দেখে নিচে নামলাম, যতদূর চোখ যায় কেবল মানুষ আর মানুষ, ছেলে, বুড়ো, বাচ্চা সবাই আছে, এরই মাঝে ছোটরা ফুটপাথ ধরে বসে গেছে আর বড়রা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে।
একটার পর একটা বাজনা বাজিয়ের দল আসছে, এদের মধ্যমণি হয়ে আছে দৈত্যাকৃতির কোনো ঐতিহাসিক চরিত্র। রাজা-রানী, জলদস্যু, বীর যোদ্ধা, নাবিক, আবিষ্কারক, নর্তকী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের চেহারাধারী এদের কেউ কেউ আবার চারদিকে চকোলেট বিলিয়ে দিচ্ছে।
কয়েক কিলোমিটার লম্বা এ মিছিল আমার সামনে দিয়ে যেতে দুঘন্টার উপর সময় নিলো।
আজকের ছবির গল্প এই দৈত্যাকার পুতুল আর তাদের মিছিল নিয়েই, চলুন তাদের কিছু ছবি দেখা যাক।



















কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন